সোমবার ৩ জুলাই মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক ডেকেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক আর মন্ত্রীসভার বৈঠকের মধ্যে ফারাক রয়েছে। সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মন্ত্রীসভার বৈঠক ডাকা হয়। সেই বৈঠকে শুধু ক্যাবিনেট মন্ত্রী আর স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীরা থাকেন। কেন্দ্রের সরকারের প্রতিমন্ত্রীরা মন্ত্রীসভার বৈঠকে ডাক পান না। কিন্তু মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক হল, সমস্ত মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক। নয়াদিল্লির ক্ষমতার অলিন্দে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বড় আলোচনা হল, এদিন ওই মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকের পরই মন্ত্রীসভার রদবদল ঘটাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় চার জন সদস্য রয়েছেন। কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক হলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী । বনগাঁর শান্তনু ঠাকুর হলেন বন্দর ও জাহাজ প্রতিমন্ত্রী। জন বার্লা হলেন সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী। তিনি আলিপুরদুয়ারের সাংসদ। আর বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার হলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। সংবাদ সূত্রের খবর, মন্ত্রীসভার আসন্ন রদবদলে বাংলা থেকে এক বা দু’জন বাদ পড়তে পারেন। পরিবর্তে কোনও নতুন মুখ সেখানে স্থান পাবেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। সূত্রের এও খবর, এ ব্যাপারে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে কথা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে এর আগে মন্ত্রী ছিলেন আসানসোলের প্রাক্তন সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় ও রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী। কিন্তু ২০২১-এর ভোটের পর বাবুল ও দেবশ্রী মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন। পরিবর্তে নতুন চারজনকে মন্ত্রী করা হয়। তবে এবার নিশীথ প্রামাণিকের মন্ত্রীত্ব যাওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করা হচ্ছে। মাত্র কদিন আগেই নিশীথের নিরাপত্তা বাড়িয়ে জেড প্লাস করা হয়েছে। যা তাৎপূর্যপূর্ণ।
লোকসভা ভোটের আগে মন্ত্রীসভার রদবদল নতুন নয়। ২০২৪ সালে লোকসভা ভোট। তার আগে আর এক বছরও পুরো বাকি নেই। অতীতে অটল বিহারী বাজপেয়ীও ২০০৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে ২০০৩ সালে মন্ত্রীসভায় বড় রদবদল করেছিলেন। প্রমোদ মহাজনের মতো হেভিওয়েট মন্ত্রীকে মন্ত্রীসভা থেকে সরিয়ে এনে বিজেপির সংগঠনের দায়িত্বে আনা হয়েছিল তখন। এবারও সম্ভাব্য রদবদলে তেমন কিছু ঘটে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। অর্থাৎ মন্ত্রীসভা থেকে কোনও বড় মন্ত্রীকে সংগঠনের দায়িত্বে আনা হতে পারে। সেদিক থেকে তাঁরা ভূপেন্দ্র যাদব ও ধর্মেন্দ্র প্রধানের কথা বলছেন।
পর্যবেক্ষকদের মতে, লোকসভা ভোটের আগে এহেন রদবদলে প্রশাসনিক কার্যকারিতা বিচার্য হয় না। রাজনৈতিক কারণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এ বছর তেলঙ্গানা, রাজস্থান, ছত্তীসগড়, মধ্যপ্রদেশে ভোট রয়েছে। রদবদলে সেই সব রাজ্যের অঙ্ক হয়তো মাথায় রাখা হবে। তা ছাড়া মহারাষ্ট্রে রবিবারের পরএনসিপি নেতা প্রফুল্ল প্যাটেলকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় নেওয়া হবে কিনা তা নিয়েও রাজনৈতিক মহলে আগ্রহ রয়েছে।
সোমবার মন্ত্রী পরিষদের এই বৈঠকের আগে গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে বৈঠক করেছিলেন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা ও সাধারণ সম্পাদক বিএল সন্তোষ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রীসভার রদবদলের সম্ভাবনা নিয়ে তারপরই আলোচনা ও জল্পনায় গতি পায়।