অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

শুক্রবার ভারতে কেন্দ্রের বিজেপি বিরোধী দলের মহাসম্মেলনের ফর্মূলা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে


শুক্রবার ভারতে কেন্দ্রের বিজেপি বিরোধী দলের মহাসম্মেলনের ফর্মূলা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে
শুক্রবার ভারতে কেন্দ্রের বিজেপি বিরোধী দলের মহাসম্মেলনের ফর্মূলা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে

ভারতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে শুক্রবার ২৩ জুন বিরোধী দলগুলির মহা-সম্মেলনের জন্য সেজে উঠেছে বিহারের পাটনা। শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে কম-বেশি সব দলই পার্টির নেতাদের ছবি সম্বলিত পোস্টার-ব্যানার টাঙিয়েছে। তবে সব দলকে ছাপিয়ে গিয়েছে আম আদমি পার্টি। পাটনার রাস্তায় বিশাল কাটআউট বসেছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর। নিচে লেখা ‘দেশ কি লাল, কেজরিওয়াল।’

বৃহস্পতিবার ২২ জুন পাটনা পৌঁছে গিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি। পৌঁছেছেন কেজরিওয়াল, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্ধ্যার মধ্যেই সব নেতা, মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছে যাবেন বিহারের রাজধানীতে।

এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে কংগ্রস, তৃণমূল, জেডিইউ, আরজেডি, এনসিপি, আপ, সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে, সিপিএম, সিপিআই-সহ প্রায় দেড় ডজন পার্টির প্রতিনিধি শুক্রবার বৈঠকে যোগ দিতে চলেছেন। বৈঠকের আহ্বায়ক বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার সব দলকেই নেতৃস্থানীয়দের বৈঠকে পাঠাতে অনুরোধ করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিগত নয় বছরের শাসনে এই প্রথম বিরোধী দলগুলি বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে এক টেবিলে বসতে চলেছে। এর আগে বিরোধী নেতারা বিভিন্ন সময়ে এক মঞ্চে হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু গঠনমূলক আলোচনা হয়নি। বোঝাপড়া নিয়ে এমন বৈঠকেরও নজির নেই। যদিও নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় কাছাকাছি আসার কথা বলেছেন নানা সময়ে।

পাটনার বৈঠক বসার আগেই তাই নীতীশ কুমারের দল জনতা দল ইউনাইটেড বিরোধী মহা-সমাবেশকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর বড় সাফল্য বলে তুলে ধরা শুরু করেছে। দীর্ঘদিন বিজেপির সঙ্গে ঘর করা নীতীশকেই যে সব দল বিজেপি বিরোধী সেতুবন্ধনের দায়িত্ব সঁপেছে তা জেডিইউ-র জন্য অত্যন্ত শ্লাঘার বিষয় বলে মনে করছে পার্টি।

১৯৭৪ সালের জুন মাসেই পাটনার গান্ধী ময়দান থেকে জয়প্রকাশ নারায়ণ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে দিল্লির গদিচ্যুত করতে সম্পূর্ণ ক্রান্তি বা টোটাল রেভ্যুলুশনের ডাক দিয়েছিলেন। গান্ধী ময়দানের সেই সভার অন্যতম আয়োজক ছিলেন বিহারের আজকের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ। শুক্রবার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সিংহভাগ বিরোধী দলকে এক টেবিলে বসাতে চলেছেন সেই নীতীশ কুমারই।

শুক্রবারের বৈঠকে কোনওভাবে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব কি না তা নিয়ে আলোচনা চলছে বিশেষজ্ঞ মহলে। জেডিইউ-র এক নীতীশ ঘনিষ্ঠ প্রবীণ নেতার কথায়, "এমন কোনও বাসনা আমাদের নেই। নীতীশজি সলতে পাকানোর কাজটি করে দেবেন মাত্র। একমাত্র চেষ্টা হবে পরের বৈঠকের দিন ও স্থান নির্ধারণ এবং উপস্থিত নেতাদের বক্তব্যের ভিত্তিতে পরবর্তী আলোচনার এজেন্ডা তৈরি করা।"

এরই মধ্যে লালুপ্রসাদ যাদব ঘনিষ্ঠ মহলে একাধিকবার বলেছেন, শুক্রবারের বৈঠক থেকে নীতীশ কুমারকে চেয়ারম্যান করে একটি কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন করা হোক। যদিও জেডিইউ এই প্রস্তাবকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। তারা মনে করছেন, লালু আসলে চান নীতীশ এবার দিল্লিতে গিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে মন দিন। তার আগে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে তাঁর পুত্র তেজস্বীকে বসিয়ে দিয়ে যান। কিন্তু নীতীশ এখনই মুখ্যমন্ত্রীর গদি ছাড়তে নারাজ।

পাটনার রাজনৈতিক মহল মনে করছে, শুক্রবারের বৈঠকে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি নীতীশ এড়িয়ে যেতে চান। তবে সেটা সম্ভব হবে বলেও মনে করছে না জেডিইউ নেতৃত্বের একাংশ। আর সেই প্রসঙ্গ উঠলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একের বিরুদ্ধে এক ফরমুলার পক্ষে দাঁড়িয়ে যেতে পারে বেশিরভাগ আঞ্চলিক দল। লালুপ্রসাদ, নীতীশ কুমারদের আরজেডি, জেডিইউ তো আছেই, সিপিএম, সিপিআই, সিপিআইএমএল-এর মতো বাম দলগুলিরও এই ফরমুলায় খুব একটা আপত্তি নেই। তবে তারা মনে করছে, রাজ্য নয়, আসন ধরে এই ফরমুলা বিবেচনা করা হোক।

আসলে তৃণমূল নেত্রী সব আঞ্চলিক দলের মনের কথাই বলেছেন। কিন্তু কংগ্রেস এই প্রস্তাবে কী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সেটাই দেখার। কারণ মমতার প্রস্তাবে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা কংগ্রেসেরই। কংগ্রেস শিবির অন্তত সাড়ে তিনশো আসনে লড়াইয়ে আগ্রহী। কিন্তু মমতার ফরমুলা মানতে হলে তাদের আসন কমে আড়াইশোর নিচে নেমে যাবে। দেশের প্রধান বিরোধী দল তা মানবে কিনা তা নিয়ে ঘোর সংশয় আছে রাজনৈতিক মহলে। কংগ্রেসের তরফে বৈঠকে থাকবেন সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে ও প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী।

তৃণমূলের চাইতেও কংগ্রেসের সমস্যা বেশি তেলেঙ্গানায় ভারত রাষ্ট্র সমিতি, দিল্লি, পাঞ্জাব, গোয়া ও গুজরাতে আম আদমি পার্টি এবং উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টিকে নিয়ে। জেডিইউ-র তরফে একটি ফরমুলা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, ১৯৭৭ সালে যে ফরমুলায় বিরোধী দলগুলির বোঝাপড়া হয়েছিল, এখন সেই সূত্র খতিয়ে দেখা যেতে পারে। তা হল, বিগত তিনটি ভোটে প্রাপ্ত আসন ও ভোটের শতাংশের হিসাবে দলগত আসন সংখ্যা নির্ধারণ করা। যদিও জেডিইউ আনুষ্ঠানিকভাবে এমন কোনও ফরমুলা পেশ করবে না। কালকের বৈঠকে নীতীশের মূল উদ্দেশ্য বিরোধীদের বোঝাপড়ার রথের চাকা গড়িয়ে দেওয়া।

XS
SM
MD
LG