বৃহস্পতিবার ১৫ জুন ঘড়িতে তখন সকাল পৌনে সাতটা। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার প্রতিদিনের মতো তাঁর পাটনার ১, অ্যানে মার্গের বাংলো থেকে বেরিয়ে সার্কুলার রোডের দিকে যাচ্ছিলেন। পাশেই দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ি দেবী এবং জীতনরাম মাঝির বাংলো। লম্বা সার্কুলার রোড চলে গিয়েছে বিমান বন্দর পর্যন্ত। সেই পথ ধরে কিছুটা গিয়ে প্রতিদিন ফিরে আসেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার সকালেও সে ভাবে রাস্তার এক পাশ দিয়ে হাঁটছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আশপাশে ছিলেন নিরাপত্তা রক্ষীরা। হঠাৎ দুই তরুণ দুটি বাইকে তীব্র বেগে ধেয়ে এসে মুখ্যমন্ত্রীর গা ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। আচমকা এই ঘটনায় আঁতকে উঠে এক লাফে ফুটপাথে উঠে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। চোখ মুখে আতঙ্ক গ্রাস করে তাঁর। এক পুলিশ কর্মীর কথায়, টাল সামলাতে না পারায় পড়েই যাচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
নিরাপত্তারক্ষীদের পরামর্শে আর না এগিয়ে বাংলোয় ফিরে যান মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশ অবশ্য খানিক পরেই দুই বাইকবাজকে আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বোঝার চেষ্টা করেছে কেন তারা এমন করলেন।
স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর উপর বাইকবাজদের হামলার চেষ্টার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক মাধ্যমে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছেন রাজ্যবাসী। তাঁরা জানান, বাইকবাজদের দাপটে প্রাণ ওষ্ঠাগত তাঁদের। অনেকেই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরছেন, বলেছেন রাজ্যের জাতীয় সড়ক, এক্সপ্রেসওয়ে, শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলি ঘোড়দৌড়ের মাঠের মতো হয়ে উঠেছে বাইকবাজির লেন। দিন রাত তীব্র বেগে ছুটছে বাইক।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর দিকে তীব্র গতিতে বাইক নিয়ে ধেয়ে যাওয়া দুই তরুণ সখের বাইকবাজ নাকি অন্য কোনও উদ্দেশে এসেছিল পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে। অন্যান্য মুখ্যমন্ত্রীদের মতো নীতীশও জেড প্লাস ক্যাটিগরির নিরাপত্তা পান। যদিও তিনি নিজে নিরাপত্তার কড়াকড়ির ঘোর বিরোধী। যেমন অ্যানে মার্গের বিশাল বাংলোর ভিতরে পুলিশ কর্মী হাতে গোনা কয়েকজন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসা লোকজনকে দফায় দফায় তল্লাশিও করা হয় না।
মর্নিং ওয়াকেও তিনি সঙ্গে বিপুল সংখ্যায় পুলিশ নিয়ে বের হন না। কারণ, পাটনার ওই এলাকাটিতে ভিভিআইপি-দের বাস। সকালে অনেক মন্ত্রী, আমলা, বিচারপতি মর্নিং ওয়াকে বের হন। তাছাড়া অদূরে বিমানবন্দর হওয়ায় গাড়ি যাতায়াত লেগেই আছে। বৃহস্পতিবার ঘটনার সময়ও মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে জটলা এড়াতে নিরাপত্তারক্ষীরা দূরে দূরে ছিলেন।
নীতীশের ১ অ্যানে মার্গের বাংলোতেই দীর্ঘ সময় ছিলেন লালুপ্রসাদ ও রাবড়ি দেবী। তাঁরা বাংলোর মধ্যেই হাঁটাহাঁটি করতেন। এখনও তাই করেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে পাওয়া বাংলোয়।