উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুরে দুই জনজাতির মধ্যে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা অবিরাম হিংসার মধ্যেই ফের বড় ধরনের হিংসার ঘটনা ঘটল। পূর্ব ইম্ফলে জঙ্গি হামলায় নয় জন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ১০জন। পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার ১৩ জুন বেশি রাতে সশস্ত্র জনতা পূর্ব ইম্ফল জেলার একটি গ্রামে হামলা চালায়। এলোপাথাড়ি গুলি চলে। তাতে ঘটনাস্থলেই নয় জনের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ ১০ জনকে ইম্ফলের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে আক্রান্ত গ্রামটিতে মৈতেই সম্প্রদায়ের বাস। নিহত ও আহতরাও ওই সম্প্রদায়ের মানুষ। ফলে ধরেই নেওয়া যায় হামলাকারীরা কুকি জনগোষ্ঠীর।
মঙ্গলবার রাতের হত্যাকাণ্ডটি ধরে গত ৩ মে থেকে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১৫। গত পরশু পূর্ব ইম্ফলেই একটি গ্রামে গুলি করে হত্যা করা হয় কুকি জনগোষ্ঠীর এক ছাত্রকে। মঙ্গলবারের ঘটনায় অসম রাইফেলস-এর জওয়ানদের সঙ্গে হামলাকারীদের জোর সংঘর্ষ হয়। জঙ্গলের মধ্য থেকে গুলি ছুঁড়তে থাকা জঙ্গিদের কেউ জওয়ানের গুলিতে আহত বা নিহত হয়েছে কি না জানা যায়নি। তবে আচমকা আক্রমণে তারা নয় জনের প্রাণ কেড়ে নেয়।
এদিকে, রাজ্যপাল অনশূয়া উইকি-র নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার যে শান্তি কমিটি গঠন করেছিল কুকি ও মৈতেই, দুই সম্প্রদায়ই তা বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিবদমান দুই গোষ্ঠীই দাবি করেছে আগে প্রতিপক্ষকে অস্ত্রমুক্ত করতে হবে।
রাজ্যপাল সবচেয়ে অশান্ত চূড়াইচাঁদপুর গিয়ে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। ওই এলাকায় কুকিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। কুকিদের একাধিক সংগঠন রাজ্যপালকে দেওয়া স্মারকলিপিতে বলেছে, মৈতেইরা ২৫৩টি চার্চ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। অবিলম্বে সেগুলির সংস্কার করতে হবে সরকারকে।
রাজ্যপাল ইম্ফলে ফিরে আসার পর পরই মত বদলে যায় সংঘর্ষে লিপ্ত দুই গোষ্ঠীর। তাদের বক্তব্য, হামলা না থামা পর্যন্ত শান্তি বৈঠক অর্থহীন।
শান্তি উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ায় সব মহলেই প্রশ্ন উঠেছে এরপর কী করণীয় সেই বিষয়ে। জঙ্গি দমন অভিযানের পাশাপাশি সিবিআই তদন্ত শুরু হয়েছে। কিন্তু হিংসা না থামায় তদন্তও ঠিকঠাক করা যাচ্ছে না। প্রশাসনের একাংশের আশঙ্কা, এরপর দুই গোষ্ঠী বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটিকেও বয়কট করতে পারে। ইতিমধ্যে কমিশন কাজ শুরু করেছে।