ভারতে ওড়িশার বালাসোরের কাছে পড়ে রয়েছে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের বগিগুলো। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রক্ত। শুধু করমণ্ডল নয়, আরও দু’টি ট্রেন একইভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে আছে। সেই কামরাগুলির নীচেও প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে বেড়াচ্ছেন উদ্ধারকারী দল, বের করে আনছেন নিথর দেহ। এক মুহূর্তে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় এখনই মৃতের সংখ্যা সরকারি হিসেবে ৩০০ ছাড়িয়েছে। বেড়ে চলেছে আরও। সাম্প্রতিক ইতিহাসে এত বড় রেল দুর্ঘটনা আগে ঘটেনি।
এখনও হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন শ’য়ে শ’য়ে মানুষ। ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। সামনে এসেছে দুর্ঘটনার প্রাথমিক রিপোর্ট। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ভুল ট্র্যাকে’ বা ‘লুপ লাইনে’ চলে গিয়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস।
লুপ লাইন কী?
স্টেশনে ঢোকা বা বেরানোর মুখে এই লাইন ছড়িয়ে থাকে। সাধারণত মালগাড়ি দাঁড়ানোর জন্যই রেল এই লুপ লাইন তৈরি করে। এই লাইন ৭৫০ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। তবে সাম্প্রতিককালে ১৫০০ মিটার পর্যন্ত লম্বা লুপ লাইন তৈরি করার দিকেও নজর দিয়েছে রেল।
কেন এই লাইন তৈরি করা হয়?
যাত্রীবাহী ট্রেন যখন পাস করে, তখন মালগাড়িকে ওইসব লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এটাই লুপ লাইনের উদ্দেশ্য।কীভাবে লুপ লাইনে গেল করমণ্ডল এক্সপ্রেস?
২রা জুন দুপুর ৩:১৫ নাগাদ শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়ে আপ ১২৮৪১ শালিমার-চেন্নাই সেন্ট্রাল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সন্ধ্যা ৬:৫৫ নাগাদ ট্রেনটি পেরিয়ে যায় বাহানগর বাজার স্টেশন। সেই স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ায় না। দ্রুতগতিতে পেরিয়ে যায় স্টেশন। তার পরেই ট্রেনটি ভুল করে ঢুকে পড়ে লুপ লাইনে। সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল সারি সারি মালগাড়ি। ওই লাইন দিয়েই যাতায়াত করে মালবোঝাই ট্রেনগুলি।
এর মধ্যেই সিগন্যালিং কন্ট্রোল রুমের ভিডিও সামনে এসেছে। একটি সূত্র বলছে, সেই ভিডিওর ভিত্তিতে তৈরি প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, এই ‘হিউম্যান এরর’-এর কথা। সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমে রেলের শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, লুপ লাইনে এক্সপ্রেস ঢুকে পড়ার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। যখন ট্রেনটি লুপ লাইনে ঢুকে পড়েছিল, তখন ট্রেনের গতি ছিল ঘণ্টায় ১২৭ কিলোমিটার।
আগেও হয়েছে এমনটা
১৯৯৫ সালে একই ভুলের কারণে উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাদাবাদে ঘটে গিয়েছিল এমনই এক ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা। লুপ লাইনে ঢুকে পড়েছিল ট্রেন। তিনদিন ধরে চলেছিল তার উদ্ধারকাজ। মৃতের সংখ্যা সেখানে ৩৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শুক্রবারের দুর্ঘটনা ১৯৯৫ সালের ভয়াবহ ছবিকে ছাপিয়ে যাবে।