অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতের মধ্যপ্রদেশে কুনো জাতীয় উদ্যানে চিতামৃত্যু অব্যাহত; পরপর দু'দিনে মৃত তিন সদ্যোজাত শাবক


ভারতের মধ্যপ্রদেশে কুনো জাতীয় উদ্যানে চিতাবাঘ
ভারতের মধ্যপ্রদেশে কুনো জাতীয় উদ্যানে চিতাবাঘ

ভারতের মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে ফের সদ্যোজাত চিতা শাবকের মৃত্যু হল। বুধবার ২৪ মে কুনো জাতীয় উদ্যানের তরফে জানানো হয়েছিল, একটি চিতা শাবকরে মৃত্যু হয়েছে। জন্মেই মারা গেছে শাবকটি। অসুস্থ ছিল আরও তিন চিতা শাবক। সেগুলির মধ্যে আরও দুটি চিতার মৃত্যু হল বৃহস্পতিবার ২৫ মে।

কুনো সূত্রে জানা গেছে, প্রবল গরম এবং ডিহাইড্রেশনের কারণেই মৃত্যু হয়েছে চিতা শাবকগুলির। গত মার্চ মাসে ‘জ্বালা’ নামে একটি স্ত্রী চিতা ৪টি শাবকের জন্ম দিয়েছিল। বুধবার সেগুলির মধ্যে একটির মৃত্যু হয়েছিল। অসুস্থ ছিল বাকি তিনটিও। বৃহস্পতিবার তাদের মধ্যে আরও দুটি শাবকের মৃত্যু হল। কুনোর আধিকারিকরা জানিয়েছেন, গত ২৩ মে ওই এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেদিনই ছিল মরশুমের উষ্ণতম দিন। সেদিনই বনকর্মীরা খেয়াল করেন চিতা শাবকগুলি অত্যন্ত রুগ্ন, দুর্বল এবং অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কয়েকটির ওজনও স্বাভাবিকের তুলনায় কম ছিল। পশু চিকিৎসকরা সেদিনই এ বিষয়ে বনকর্মীদের সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তারপরেও পরপর দুদিনে দুটি চিতার মৃত্যু হল।

চতুর্থ শাবকটিকে পালপুরের একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তাদের চিকিৎসার জন্য কুনোর আধিকারিকরা ইতিমধ্যেই নামিবিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিশেষজ্ঞদের সাথে যোগাযোগ করছেন।

ভারতের মধ্যপ্রদেশে কুনো জাতীয় উদ্যানে চিতা শাবক
ভারতের মধ্যপ্রদেশে কুনো জাতীয় উদ্যানে চিতা শাবক

দক্ষিণ আফ্রিকার নামিবিয়া থেকে ২০টি চিতাবাঘ ভারতে এনেছিল কেন্দ্র সরকার। মধ্যপ্রদেশের কুনো অরণ্যে রাখা হয়েছিল তাদের। তাদের মধ্যে দু’টি চিতার ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে অসুখে ভুগে। ফিন্ডা নামে একটি পুরুষ চিতার আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে নামিবিয়া থেকে আনা ৫ বছরের স্ত্রী চিতা শাসার। ২৪ এপ্রিল মারা যায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা পুরুষ চিতা উদয়। বন দফতরের পশু চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ জানিয়েছিলেন, কুনোর এই চিতার মৃত্যুর কারণ, কার্ডিয়ো পালমোনারি ফেলিওর।

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বিশেষ বিমানে চাপিয়ে চিতাদের নিয়ে আসা হয়েছিল ভারতে। উদ্দেশ্য ছিল চিতাহীন দেশে নতুন করে এই প্রজাতির সংরক্ষণ করা। প্রায় ৭৪ বছর পরে চিতা দেশে ফিরে আসায় আনন্দও কিছু কম ছিল না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের হাতে চিতা ছেড়েছিলেন কুনোর জাতীয় উদ্যানে। কিন্তু ছন্দপতন হয় কিছুদিনেই। চিতারা অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করায় উদ্বেগ বাড়ে।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাণীবিদরা বলছেন, আফ্রিকান চিতা এইভাবে থাকে না। তাদের বিচরণের জন্য অনেক বড় খোলা জায়গা লাগে। কুনোর জাতীয় উদ্যানে সেই ব্যবস্থা নেই। তাদের খোলামেলা জায়গায় ছাড়তে হবে, হাতের কাছে যাতে শিকার থাকে তা দেখতে হবে। আফ্রিকায় যখন চিতারা ছিল তখন তাদের জন্য বিশাল বড় জায়গা রাখা হয়েছিল। প্রতিদিন দু’বার করে গিয়ে দেখে আসা হত চিতাদের। তারা কী খাচ্ছে, কখন খাচ্ছে, শরীর ঠিক আছে কিনা এইসব খতিয়ে দেখা হত দিনে কম করেও দু’বার।

দূর থেকে বনকর্মীরা নজরে রাখতেন চিতাদের, পশুবিদরাও থাকতেন তাঁদের সঙ্গে। কোনও চিতার আচরণে বিন্দুমাত্র অস্বাভাবিকতা দেখলে তাকে এনে চিকিৎসা করা হত। যেহেতু তারা বন্যপ্রাণী তাই সেই মতোই তাদের থাকার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। ভারতে যেখানে চিতাদের রাখা হয়েছে সেখানে এমন পরিবেশ নেই। তাছাড়া চিতাদের দেখাশোনাও ঠিক মতো হচ্ছে না বলে অভিযোগ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাণীবিদদের।

XS
SM
MD
LG