অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতের নরেন্দ্র মোদীর সরকার খারিজ করল ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্ট


ভারতের নরেন্দ্র মোদীর সরকার খারিজ করল ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্ট
ভারতের নরেন্দ্র মোদীর সরকার খারিজ করল ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্ট

চলতি মে মাসের গোড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা 'ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম' তাদের সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে ভারতকে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের ঘটনায় ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। সেই মতো যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের কিছু সুপারিশ করেছে তারা। তার মধ্যে অন্যতম হল ধর্মীয় স্বাধীনতাহরণকারীদের উপর যুক্তরাষ্ট্রের সফরে নিষেধাজ্ঞা জারি এবং সে দেশে তাদের সম্পত্তি থাকলে তা বাজেয়াপ্ত করা।

সেই রিপোর্ট নিয়ে ক’দিন ধরেই শোরগোল চলছিল ভারতে। অবশেষে ভারত সরকার ওই রিপোর্টের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি রিপোর্টটিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এবং ‘পক্ষপাতমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন। কার্যত এই ভাষাতেই বিবিসি-র গুজরাত দাঙ্গা বিষয়ত তথ্যচিত্রটি ভারতে প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল মোদী সরকার।

বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি এক বিবৃতিতে আরও বলেছেন, "আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্পর্কিত মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ২০২২ রিপোর্ট প্রকাশের বিষয়ে আমরা অবগত। দুঃখের বিষয়, এই ধরনের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করেই তৈরি হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ বোঝাপড়া।"

আগামী জুন মাসেই যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি নিউ ইয়র্ক পৌঁছবেন ১০ জুন। তার আগে ১ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে থাকবেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। কংগ্রেস নেতা তাঁর ভারত জোড়ো যাত্রার মূল বিষয় করেছিলেন ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতিকে। স্বভাবতই প্রধানমন্ত্রী ও রাহুলের সফরের মুখে

ভারতে ধর্মাচরণের স্বাধীনতা সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্ট ভারতের কেন্দ্র সরকারের অবস্থান নিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছে।

গত সোমবার ১৫ মে-ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন ফের সেই রিপোর্ট নিয়ে সরব হয়। অফিস অফ ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম এক সাংবাদিক সম্মেলন করে বলে, "রাশিয়া, ভারত, চিন এবং সৌদি আরব সহ অনেক দেশেই সংখ্যালঘুদের স্বাধীনতা প্রশ্নের মুখে।"

যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্টটিতে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির কথা প্রায় ২৮ বার উল্লেখ আছে। এছাড়া বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দলের নাম আছে যথাক্রমে ২৪ বার এবং সাতবার।

গত সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্ট ঘৃণা ভাষণ বন্ধে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে কড়া বার্তা দিয়েছে। তাতে ভিন্ন ধর্মের প্রতি অসহিষ্ণুতা, হিংসা, ঘৃণা, বিদ্বেষ পোষণের ঘটনা নিয়েই মূখ্যত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। এবার বিদেশ থেকেও এল এই বিষয়ে উদ্বেগের খবর।

১৯৯৮ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের ঘটনায় নজরদারির কাজ করে আসা এই যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা টানা চারবার ভারত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল তাদের বার্ষিক রিপোর্টে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনকে পেশ করা রিপোর্টে তারা ভারতের বিরুদ্ধে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ করার সুপারিশও করেছে। তারা বলেছে, যে সব প্রশাসনিক, আধিকারিক এবং এজেন্সির লোকজন ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের ঘটনায় অভিযুক্ত তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক। তারা যাতে মার্কিন ভিসা না পায় সে ব্যবস্থা করুক প্রশাসন। ওই আধিকারিকদের আমেরিকায় কোনও সম্পদ থেকে থাকলে তাও বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া হোক।

প্রসঙ্গত, গত বছর বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থা র‍্যাব-এর বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। তাদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা করে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস। তালিকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্তার নামও ছিল। ওই আধিকারিকদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গুম খুনে যুক্ত থাকার অভিযোগ করে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক মানবাধিকার সংস্থা।

ভারতের ক্ষেত্রে এই রিপোর্টে কোনও নিরাপত্তা এজেন্সি বা সরকারি সংস্থার নাম করা হয়নি। এই নিয়ে চারবার ওই সংস্থা ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও ট্রাম্প এবং বাইডেন, কোনও প্রশাসনই ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়নি। সুপারিশ মানা বা না মানা নিয়ে এবারও যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল স্পষ্ট জবাব দেননি।

প্যাটেলের কথায়, "আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত ইউএস কমিশন হল যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্বাধীন কমিশন যা প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি অফ স্টেট এবং কংগ্রেসকে নীতিগত সুপারিশ প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠিত। এটি স্টেট ডিপার্টমেন্ট বা এক্সিকিউটিভ অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের অঙ্গ নয়। এই ধরনের রিপোর্ট যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের কাছে ধর্মীয় স্বাধীনতার গুরুত্বকে তুলে ধরে।"

রিপোর্টে বিজেপির প্রাক্তন মুখপাত্র নূপুর শর্মার মহম্মদের অবমাননা, অল্ট নিউজের সাংবাদিক জুবেইদের হেনস্থা, তেলেঙ্গানায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মুসলিম সংরক্ষণ প্রত্যাহার সংক্রান্ত ঘোষণা, বিলকিস বানোকে ধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তি-সহ একাধিক বিতর্কিত বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে।

XS
SM
MD
LG