বৃহস্পতিবার ৪ মে ভারতে আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাবল ভুট্টো। বৃহস্পতিবার ৪ মে ও শুক্রবার ৫ মে গোয়ায় হতে চলেছে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের সম্মেলন। সেখানে পাকিস্তান ছাড়াও চীন, কাজাখস্তান, রাশিয়া, কিরগিজস্তান, তাজাকিস্তান ও উজবেকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অংশ নেবেন।
প্রায় দশ বছর পর পাকিস্তানের কোনও মন্ত্রী ভারতে আসছেন। চীন, রাশিয়া এবং পাকিস্তান ও ভারতের বিদেশমন্ত্রীদের এক মঞ্চে উপস্থিতিও সাম্প্রতিককালে বিরল ঘটনা। আরও তাৎপর্যপূর্ণ হল, চীন, রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রীরা হাজির থাকলেও গোয়ার সম্মেলন ঘিরে যত কৌতুহল বিলাবল ও ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে নিয়ে। তাঁদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে কি না, তা নিয়ে কৌতুহল নিরসন হয়নি সম্মেলন শুরু কয়েক ঘণ্টা আগেও। যদিও বিদেশমন্ত্রক সূত্রে খবর, চিন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে জয়শঙ্করের।
বিলাবল পাক বিদেশ মন্ত্রী হিসাবে এই প্রথম ভারত সফরে আসছেন। স্বভাবতই নিকট প্রতিবেশীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে কৌতুহল রয়েছে দুই দেশেই। তাতে নয়ামাত্রা যোগ করেছেন বুধবার ভারতে আসা পাক সাংবাদিকরা। এসসিও সম্মেলন কভার করতে ভারত সরকার ভিসা দিয়েছে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সাংবাদিককে। বুধবার পাঞ্জাবে ওয়াঘা বর্ডার পেরনোর পর পরই তাঁরা দু-দেশের মধ্যে সংঘাত বন্ধের আর্জি জানিয়ে ট্যুইট করেছেন। বলেছেন, অফুরন্ত সম্ভাবনাকে ছুঁতে দু দেশের মধ্যে শান্তি বিরাজ করুক। পাক সাংবাদিকেরা বিলাবল-জয়শঙ্করের একান্ত বৈঠকেরও আর্জি জানান।
কিন্তু দিল্লির পররাষ্ট্রমন্ত্রকের খবর, এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে গোয়ার সম্মেলনে পাক বিদেশমন্ত্রীকে আলাদা করে কূটনৈতিক খাতিরযত্ন করার কোনও ইচ্ছে ভারতের নেই। তবে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পাকিস্তান প্রকাশ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা না বললেও কূটনৈতিক চ্যানেলে বার্তা পাঠিয়েছে। আসলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরেই এখন ভারতের সঙ্গে সু-সম্পর্ক তৈরির দাবি আছে। যদিও এখন পর্যন্ত দিল্লির কর্তাদের মনোভাব, বাকি সদস্য দেশের পরারাষ্ট্রমন্ত্রীদের মতোই ব্যবহার করা হবে বিলাবলের সঙ্গে।
গত মাসেই বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর বিলাবলের সঙ্গে একান্ত বৈঠকের সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিয়েছিলেন। প্রশ্নের জবাবে বলেছিলে, "আমরা সেই প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা নিয়ে ভাবিত নই যারা জঙ্গিবাদ রপ্তানি করে, অন্য দেশে নাশকতাকে প্রশ্রয় দেয়।"
বিদেশমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিদেশমন্ত্রক সূত্রের খবর, পাক বিদেশ মন্ত্রীকে আলাদা করে গুরুত্ব না দিয়ে নয়াদিল্লি ইসলামাবাদকে তাদের আচরণ নিয়ে বার্তা দিতে চায়। তাতে দেশে বিলাবল এবং পাক সরকার বিপাকে পড়বে। কারণ ক্রমবর্ধমান আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পাকিস্তানের ভিতর থেকে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের দাবি উঠেছে সে দেশের নাগরিক সমাজ এবং রাজনীতিকদের মধ্য থেকেও। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সেই প্রচেষ্টা শুরুও করেছিলেন।
তাতে জল ঢেলে দেন বিলাবলই। জাতিসংঘের সভায় যোগ দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘গুজরাতের কসাই’ বলে আক্রমণ করেন। ওই বক্তব্যের জেরে ব্যক্তি বিলাবল সম্পর্কে আপত্তি রয়েছে নয়াদিল্লির।
বিদেশ মন্ত্রকের আমলারা তাঁর মধ্যে দাদু জুলফিকার আলি ভুট্টোর ছায়া দেখতে পান। ১৯৬৫-র ভারত-পাক যুদ্ধের সময় জুলফিকার ছিলেন পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী। পরে তিনি সে দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হন। যুদ্ধ শেষে জুলফিকার হুংকার দেন, হিন্দুস্থানের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ হাজার বছর ধরে চলবে। সেই কথা পরবর্তী পাক রাষ্ট্রপ্রধানদের কাজে বারে বারে প্রতিফলিত হয়েছে। আর জুলফিকার কন্যা তথা বিলাবলের মা প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির তো কাশ্মীর প্রশ্নে অনড় মনোভাব নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের ভিত পুঁতেছিলেন। দেশের আর্থিক অস্থিরতা সামলাতে ব্যস্ত বর্তমান পাক প্রধানমন্ত্রী শরিফ সুর নরম করে চললেও বিলাবল পূর্বসূরিদের পথেই হিন্দুস্থানের বিরুদ্ধে সংঘাতের আবহ জিইয়ে রেখেছেন।
তিনি এসসিও সম্মেলনের আমন্ত্রণ গ্রহণ করায় কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে পাক বিদেশমন্ত্রীর প্রতি যে টুকু যা করণীয় তা পালন করবে ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, এসসিও সম্মেলন দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনার মঞ্চও নয়। ফলে সেখানে কোনও পক্ষেরই দ্বিপাক্ষিক ইস্যু উত্থাপনের সুযোগ নেই। এখন দেখার প্রতিবেশী দেশের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন কি না জয়শঙ্কর।