অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতে সুপ্রিম কোর্ট খুলে দিচ্ছে ছ'মাসে ডিভোর্সের পথ


ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ভবন - ফাইল ফটো- এপি
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ভবন - ফাইল ফটো- এপি

বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে সোমবার ১লা মে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ বলেছে, কোনও দম্পতি তৎকাল বিচ্ছেদ চাইলে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারবেন। বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কৌল, সঞ্জীব খান্না, এএস ওকা, বিক্রম নাথ এবং জেকে মহেশ্বরীর সাংবিধানিক বেঞ্চ বলেছে, সংবিধানের ১৪২ নম্বর অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্ট সরাসরি বিবাহ বিচ্ছেদে সায় দিতে পারে, যদি সংশ্লিষ্ট দম্পতি হলফনামা দিয়ে জানান, তাঁদের মধ্যে বোঝাপড়ার সব রাস্তা বন্ধ। তারা আর এক সঙ্গে থাকতে চান না।

সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দিয়েছে ১৯৫৫ সালের হিন্দু বিবাহ আইনের ১৩বি ধারাটির বিধানের কারণে। ওই ধারা অনুযায়ী, স্বামী-স্ত্রী চাইলেও কম করে ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে আদালত থেকে বিচ্ছেদের ডিক্রি পাওয়ার জন্য।

বাস্তবে পারিবারিক আদালত থেকে বিচ্ছেদের অনুমতি পেতে বছরের পর বছর লেগে যায়। ফলে নতুন করে জীবন শুরু করাও পিছিয়ে যায় বিচ্ছেদের আবেদনকারীদের। সুপ্রিম কোর্ট সোমবার বলেছে, কোনও দম্পতি চাইলে সরাসরি শীর্ষ আদালত থেকে বিচ্ছেদের ডিক্রি পেতে পারেন।

আসলে নিম্ন আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত সব বিচারবিভাগের এক্তিয়ার নির্দিষ্ট করা আছে। নিম্ন আদালতের বিষয় নিয়ে সরাসরি জেলা বা হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া যায় না। ডিভোর্সের ক্ষেত্রে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সুযোগ নেই বর্তমান আইনে।

কিন্তু সোমবার শীর্ষ আদালত সংবিধানের ১৪২ নম্বর অনুচ্ছেদটি হাতিয়ার করে বলেছে, ডিভোর্সের মামলায় তারা সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারে। অর্থাৎ কোনও দম্পতি চাইলে সরাসরি শীর্ষ আদালতে দরখাস্ত করতে পারবেন এরপর। তবে শীর্ষ আদালত সেই ক্ষেত্রেই ডিক্রি মঞ্জুর করবে যেখানে সম্পর্ক জোড়া লাগার কোনও সম্ভাবনা নেই, বরং একত্রে থাকলে সংশ্লিষ্ট দম্পতি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য তা সমস্যার হবে, সেই সব আবেদনই একমাত্র মঞ্জুর করবে সুপ্রিম কোর্ট।

আদালতের হিন্দু বিবাহ আইনের ক্ষেত্রেই শুধু হস্তক্ষেপ করার কারণ, ওই আইনেই বেশিরভাগ বিয়ে হয়। হিন্দু দম্পতির সামাজিক বিয়েকেও হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টের অধীনে বিবেচনা করে আদালত। রেজিস্ট্রি ম্যারেজের ক্ষেত্রেও স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্টে কেউ আবেদন না করলে হিন্দু যুগলের বিয়ে হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টে নথিভুক্ত হয়। হিন্দু ও স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্ট ছাড়াও ভারতে মুসলমান ও খ্রিস্টান এবং শিখ ম্যারেজ অ্যাক্ট চালু আছে।

হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টের ১৩-বি ধারায় মামলা দায়েরের পর কমপক্ষে ছয় মাস অপেক্ষার বিধানটি রাখা হয়েছে মত বদলের সুযোগ দিতে। অর্থাৎ ছয় মাসের মধ্যে উভয় অথবা যে কোনও একপক্ষ গিয়ে ডিভোর্সের মামলা প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। আলোচ্য ছয় মাসে আদালতও মামলা নিয়ে অগ্রসর হতে পারে না। এক আইনজ্ঞের কথায়, আইনে এই বিধানটি রাখা হয়েছিল বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার স্বার্থে। কারণ ভারতে বিয়েকে অন্যতম সামাজিক সম্পর্ক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সব ধর্মের বিধান তাই। সেই কারণে দাম্পত্য সম্পর্কের রক্ষাকবচের কথা বারে বারে বলা আছে।

তবে ছয় মাস অতিক্রান্ত হলেই ডিভোর্সের অমুমতি মেলে তা কিন্তু মোটেও নয়। বাস্তবে ডিভোর্সের মামলার পাহাড় জমে থাকায় নিম্ন আদালতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। আবার বিচারক চাইলে মামলার শুনানিতে দম্পতিকে ফের সিদ্ধান্ত বিবেচনা করার পরামর্শ দিতে পারেন। বিচারক মনে করলে এমনকী উভয় পক্ষের অভিযোগের সত্যতা প্রমাণে অনুসন্ধানের নির্দেশ দিতে পারেন। ফলে আইনি পথে ডিভোর্স একটা কঠিন হয়ে পড়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার জানিয়েছে, যে সম্পর্ক টেকার নয়, বিচ্ছেদ অবশ্যম্ভাবী, সেখানে ছয় মাস অপেক্ষা অনর্থক। আদালত মনে করে সামাজিক সম্পর্কের কথা বিবেচনা করে ব্যক্তির অধিকারে হস্তক্ষেপ করা চলে না। বিচ্ছেদ একটা অধিকার। কোনও দম্পতিকে জোর করে একত্রে বসবাস করতে বাধ্য করা যায় না। আবার প্রত্যেকের জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকার আছে। সেই অধিকার প্রয়োগ করতে হলে ডিভোর্স পাওয়া আগে দরকার।

শীর্ষ আদালত বলেছে, শর্ত সাপেক্ষে দুপক্ষের সম্মতিতে ছয় মাস বাধ্যতামূলকভাবে অপেক্ষা না করেই সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার আর্জি মঞ্জুর করতে পারে তারা। তবে সাধারণভাবে তিনটি বিষয় আদালত বিবেচনায় রেখে পদক্ষেপ করবে। সেগুলি হল ভরণপোষণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সন্তানদের অধিকার।

সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের ১৪২ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে সোমবার এই রায় দেয়। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, শীর্ষ আদালত বিচারাধীন কোনও মামলায় মনে করলে চলতি আইনের বিধান বদল, বাতিল, সংশোধন করতে পারে।

XS
SM
MD
LG