ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি সাজানো, বিদেশ সফর, অনুষ্ঠান ইত্যাদির খরচ নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন তুলে থাকেন বিরোধী নেতারা। খরচের হিসাবও যে যার মতো করে দাবি করেন। শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রীরাও এমন সমালোচনার শিকার হন। এই রাজনীতি চলে আসছে বহুকাল। রাজনৈতিকভাবেই তার মোকাবিলা করেছে বিবদমান পক্ষ। কিন্তু গুজরাতে আপ সভাপতির বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশের এফআইআর দায়েরের ঘটনাটি থেকে সব রাজনীতিকেরই শিক্ষা নেওয়ার আছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’ রেডিও অনুষ্ঠানের শততম পর্ব প্রচারিত হয়েছে রবিবার। একশোটি পর্বে সরকারি কোষাগার থেকে কত টাকা খরচ করতে হয়েছে? আম আদমি পার্টির (AAP) গুজরাতের সভাপতি ইসুদান গান্ধবী রবিবারই ট্যুইটে দাবি করেছিলেন, প্রতি পর্বে খরচ হয়েছে গড়ে আট কোটি ৩০ লাখ টাকা। সেই হিসাবে একশো পর্বের পিছনে সরকারের খরচ হয়েছে ৮৩০ কোটি টাকা ।
গুজরাত পুলিশ সোমবার জানিয়েছে তারা গান্ধবীর বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে। কারণ প্রাথমিক তদন্তে তারা জানতে পেরেছে গান্ধবী একেবারেই মনগড়া কথা বলেছেন। তাঁর কাছে কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই। আপ নেতা অবশ্য পুলিশ এফআইআর করার আগেই ট্যুইটটি মুছে দিয়েছিলেন। আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বক্তব্য, "এটা ইচ্ছাকৃত হেনস্থা ছাড়া আর কী! পুলিশ আমাদের নেতাদের নিশানা করেছে।"
গুজরাত পুলিশের সাইবার সেলের এই মামলা নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। অনেক আপ নেতার প্রশ্ন তোলেন গান্ধবী এবং প্রধানমন্ত্রী দু’জনই রাজনীতির ব্যক্তিত্ব। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগটি মুখ্যত রাজনৈতিক। তাতে পুলিশ ঢুকে পড়ছে কেন? প্রধানমন্ত্রীর দফতর যেখানে নীরব সেখানে পুলিশের কী দায় পড়েছিল মামলা করার।
পরে জানা যায় গুজরাত পুলিশ হাতিয়ার করেছে কেন্দ্রের তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকের সংস্থা প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর ফ্যাক্ট চেক ইউনিটকে। কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি পিআইবির ফ্যাক্ট চেক ইউনিটকেই দায়িত্ব দিয়েছে খবরের সত্যমিথা নির্ধারণের, যা নিয়ে দেশব্যাপী বিতর্ক চলছে। এডিটরস গিল্ড সহ সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠন আপত্তি তুলেছে সরকারি সিদ্ধান্তে। সরকার জানিয়েছে, পিআইবির ফ্যাক্ট চেক ইউনিট কোনও খরবকে মিথ্যা বললে সেটি সামাজিক মাধ্যম থেকে সরিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি সংস্থা।
কিন্তু গান্ধবীর বিরুদ্ধে এফআইআর ফ্যাক্ট চেক ইউনিটের উদ্দেশ্য নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠে গেল। এই ঘটনায় স্পষ্ট পিআইবি-র ফ্যাক্ট চেক ইউনিটের হাত থেকে রেহাই নেই রাজনীতিকদেরও। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার আগে হাতে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ প্রস্তুত রাখতে হবে।
সাইবার পুলিশের বক্তব্য, ওই ট্যুইটের মাধ্যমে গুজব ছড়ানো, মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনমনকে বিচলিত করা, দাঙ্গা বেঁধে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি চেষ্টা হয়েছে। তাই ভারতীয় দণ্ডবিধির নির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।