ভারতের কর্নাটক রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনী প্রচারে উসকানি মূলক ভাষণ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে। নির্বাচনী প্রচার মঞ্চ থেকে তিনি মন্তব্য করেন, "কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে রাজ্যে দাঙ্গা হবে। বিজেপি শাসিত রাজ্যে দাঙ্গা হয় না।"
তাঁর এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে আগেই নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানিয়েছে কংগ্রেস। এবার বেঙ্গালুরুর একটি থানায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেছেন কংগ্রেসের প্রথম সারির দুই নেতা, রাজ্য সভাপতি ডিকে শিবকুমার এবং কর্নাটকে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা। অমিত শাহের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের মূল অভিযোগ, তিনি ভোটের স্বার্থে ধর্মীয় বিভাজনের রাস্তা নিয়েছেন। কালিমালিপ্ত করেছেন বিরোধী দলকে।
অমিত শাহের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারে বিধিভঙ্গের অভিযোগ নতুন নয়। প্রায় সব ভোটেই তাঁর মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের প্রচারে একাধিক অভিযোগ নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা পড়েছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।
গত বছর নভেম্বরে গুজরাতের ভোটের প্রচারেও তাঁর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। নাম না করে গুজরাত দাঙ্গার প্রসঙ্গ টেনে মন্তব্য করেছিলেন, "ওদের এমন শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল যে তারপর থেকে রাজ্য শান্ত আছে।" বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছিল শাহ আসলে ‘ওদের’ বলতে মুসলিমদের ইঙ্গিত করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সেই বক্তব্য নিয়েও নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল।
ভারতের উত্তরপ্রদেশ, গুজরাতের মতো কর্নাটকেও বিজেপি ধর্মীয় মেরুকরণকে এবারের ভোটে প্রধান অস্ত্র করেছে। বুধবারই রাজ্য বিজেপির প্রবীণ নেতা তথা প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী কেএস ঈশ্বরাপ্পা প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা করেন, "আমরা মুসলিমদের ভোট চাই না। মুসলিমদের সমর্থন ছাড়াই কর্নাটকে বিজেপির সরকার টিকে থাকবে।" প্রবীণ ঈশ্বরাপ্পাকে নিয়ে মাঝে বিস্তর জল ঘোলা হয় ভোটমুখী রাজ্যটিতে। দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বিজেপি এবার তাঁকে টিকিট দেয়নি। রাজ্যের প্রাক্তন গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী ঈশ্বরাপ্পার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করে আত্মহত্যা করেন একজন ঠিকাদার। সুইসাইড নোটে লেখেন, মন্ত্রীকে ৪০ পারসেন্ট কমিশন না দিলে কাজ করেও বিল আদায় করা যাচ্ছিল না। কয়েক শো কোটি টাকা পাওনা হয়ে আছে। মন্ত্রী বিল মেটাচ্ছেন না।
এমন গুরুতর অভিযোগের মুখে মন্ত্রিত্ব গেলেও টিকিট না পেয়ে রাজনীতি থেকেই অবসর ঘোষণা করেছিলেন দীর্ঘদিনের এই বিজেপি নেতা। গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ফোন পাওয়ার পর অভিমান ভুলে প্রাক্তন এই মন্ত্রী প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তাঁর মুসলিম বিরোধিতা নতুন নয়। দিন কয়েক আগেই দাবি তোলেন, "মসজিদে আজানে মাইক বন্ধ করে দিতে তবে। জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মাইকের আওয়াজে।"
বিজেপির এই মেরুকরণ কৌশল টের পেয়েই কংগ্রেস তড়িঘড়ি শাহের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল। বিজেপির মেরুকরণ অস্ত্র ভোঁতা করতেই এই সিদ্ধান্ত।
সাধারণত মন্ত্রী, পদস্থ আমলাদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে পুলিশ গড়িমসি করে। কিন্তু শাহের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিনা আপত্তিতেই গ্রহণ করেছে বেঙ্গালুরুর পুলিশ। মনে করা হচ্ছে রাজ্য প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকাতেই রাজ্য পুলিশ কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণে বিলম্ব করেনি।
কর্নাটক কংগ্রেসের প্রধান ডিকে শিবকুমার বলেন, "আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে শাহের বিরুদ্ধে। একজন সাধারণ মানুষ এটা করলে তাঁকে গ্রেফতার করা হত। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলতে পারেন না কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হবে। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শুধু বিজেপির তারকা প্রচারক নন।"
শিবকুমারের অভিযোগ, "বিনা কারণে আমার বিরুদ্ধে ২০টিরও বেশি মামলা করা হয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে সব জানিয়েছি। শাহের বিরুদ্ধেও কমিশনে অভিযোগ দায়ের করার পর পুলিশের কাছে এসেছি।"
সুরজেওয়ালা বলেন, "কংগ্রেস সাম্প্রদায়িক শক্তি পিএফআই-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে বলেছিল। মুখ্যমন্ত্রী বাসভরাজ বোম্মাই সেই কথা কানে তোলেননি। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কংগ্রেসের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দলকে ভোটের ময়দানে দাঙ্গাবাজ বলছেন।" শাহের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে পুলিশ এবং কর্নাটক প্রশাসন কোনও মন্তব্য করেনি।