অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

কেন্দ্রীয় ড্রাগ নিয়ামক সংস্থার গুণমান পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ভারতে দৈনন্দিন ব্যবহারের জনপ্রিয় ৪৮টি ওষুধ


ভারতে তৈরি ওষুধের কোনগুলি গুণমানের বিচারে সঠিক আর কোনগুলি ঠিক নয়, সে নিয়ে লম্বা তালিকা সামনে এনেছে কেন্দ্রীয় ড্রাগ নিয়ামক সংস্থা (CDSCO)। ভারতে তৈরি কাশির ওষুধ, চোখের ড্রপে বিষাক্ত উপাদান খুঁজে পাওয়ার পর থেকেই ওষুধের গুণমান পরীক্ষা করতে তৎপর হয়ে উঠেছেন দেশের ড্রাগ বিশেষজ্ঞরা। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, রোজের ব্যবহারের বেশিরভাগ ওষুধের উপাদানই সঠিক নয়। হার্টের ওষুধ, ডায়াবেটিস, প্রেশার থেকে শুরু করে মাল্টিভিটামিন–এমন ৪৮টি ওষুধ বাছা হয়েছে যেগুলি গুণমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি।

কেন্দ্রীয় ড্রাগ নিয়ামক সংস্থার ওয়েবসাইটে ওষুধের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ১ হাজার ৪৯৭টি ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিল। তার মধ্যে গুণমান পরীক্ষায় উতরে গিয়েছে ১ হাজার ৪৪৯টি ওষুধ। ৪৮টি নিত্য ব্যবহৃত ওষুধ ব্যর্থ হয়েছে পরীক্ষায়।

অথচ যে ওষুধগুলোর গুণমান ঠিক নেই সেগুলিই নাকি সবচেয়ে বেশি কেনেন গ্রাহকরা। প্রায় প্রতিদিনের রুটিনে থাকে সেইসব ওষুধ। এর মধ্যে রয়েছে নানা রকম অ্যান্টিবায়োটিক, মাল্টিভিটামিন, প্রোবায়োটিক্স, কার্ডিয়াক সমস্যার ওষুধ, অ্যান্টি ডায়াবেটিক, ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট ইত্যাদি। এমন ৪৮টি ওষুধকে চিহ্নিত করা হয়েছে যেগুলি শরীরের জন্য ঠিক নয়। মৃগীরোগে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত গাবাপেন্টিন, হাইপারটেনশনের জন্য টেলমিসার্টান, অ্যান্ডি ডায়বিটিস কম্বিনেশন গ্লিমেপিরাইড এবং মেটফর্মিনের মতো ওষুধ রয়েছে তালিকায়। শুধু তাই নয়, এইচআইভি-র রিটোনেভির ওষুধও ব্যর্থ হয়েছে পরীক্ষায়।


ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ১২, ফলিক অ্যাসিড সহ মাল্টিভিটামিনের গুণমানও নাকি ঠিক নেই। অথচ এইসব ভিটামিন ট্যাবলেট রোজের ব্যবহারে লাগে। বাচ্চাদেরও খাওয়ানো হয়। অ্যামোক্সিসিলিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি৩ ট্যাবলেট, টেলমিসার্টান ট্যাবলেট এবং আলবেনডেজোল ট্যাবলেটও রয়েছে তালিকায়।

এই ওষুধগুলো যেখানে তৈরি হচ্ছে সেই কোম্পানিগুলোর থেকে প্রতিক্রিয়া চেয়েছে কেন্দ্রীয় ড্রাগ নিয়ামক সংস্থা। গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালসের এক মুখপাত্র জানান, বিষয়টি তাদের অগোচরে নেই। কিন্তু টেলমা এ এম ট্যাবলেটের যে ব্যাচের ওষুধ পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে বলে জানা গেছে সেটি নাকি জাল ওষুধ। ১৮টি কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে এর মধ্যেই। আতস কাচের নীচে রয়েছে আরও কিছু ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি যেমন–কর্নাটকের এন্টিবায়োটিকস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল, উত্তরাখণ্ডের সাইনোকেম ফার্মাসিউটিক্যালস, হরিয়ানার নেস্টর ফার্মাসিউটিক্যালস, উত্তরপ্রদেশের জেবিজেএম।


ভারতের তৈরি ওষুধ নিয়ে বিদেশ থেকেও একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এমনকী ভারতে তৈরি ওষুধ খেয়ে শিশুমৃত্যুর অভিযোগও সামনে এসেছে। চেন্নাইয়ের গ্লোবাল ফার্মা হেলথকেয়ারের তৈরি আইড্রপ ইজরিকেয়ার আর্টিফিশিয়াল টিয়ারস নামে ওষুধটি থেকে চোখ ও রক্তের সংক্রমণ হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছিল সম্প্রতি। এই ওষুধটি থেকে এমন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হচ্ছে যাতে চোখ ফুলে লাল হয়ে যাচ্ছে, রক্তেও সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। এমনকি এই ওষুধ ব্যবহারে দৃষ্টি ঝাপসাও হয়েছে অনেকের। প্রায় ১১টি রাজ্যে এই ওষুধ থেকে চোখের সংক্রমণ ছড়ানোর খবর পাওয়ার পরেই আইড্রপটি নিষিদ্ধ করে দেয় সিডিসি।

XS
SM
MD
LG