মুসলিম সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদের তিন তালাক ব্যবস্থাকে ২০১৭ সালে অসাংবিধানিক বলে বাতিল করে দিয়েছিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। দু’ বছরের মাথায় কেন্দ্রীয় সরকার শীর্ষ আদালতের রায়কে হাতিয়ার করে মুসলিম উওম্যান (প্রোটেকশন অফ রাইটস অন ম্যারেজ) আইন, ২০১৯ চালু করে। তাতে তিন তালাক দেওয়ার অপরাধে স্বামীর তিন বছরের জেলের বিধান রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলায় হলফনামা দিয়ে বর্তমান কেন্দ্র সরকারের আইনমন্ত্রক জানিয়েছে, আদালতের রায় এবং আইন চালুর চার বছর পরও দেশে তিন তালাকে লাগাম দেওয়া যায়নি। মামলাটি হয়েছে আইনটির কিছু বিধানের পরিবর্তন চেয়ে।
২০১৯-এর আইনটি নিয়ে গোড়া থেকেই বিতর্ক ছিল। বিতর্কের মূলে আছে দুটি বিষয়। তিন তালাক নিষিদ্ধ ঘোষণা করে মুসলিম পারসোন্যাল ল-এ হস্তক্ষেপ করা হয়েছে বলে পাল্টা মামলা হয়। মামলার দ্বিতীয় ইস্যু অভিযুক্ত স্বামীর তিন বছর জেলের বিধান। তিন তালাক প্রথার বিরোধী এমন অনেক সংগঠন এবং মুসলিম নারীদের নিয়ে কাজ করা বেশ কিছু সংস্থা সাজার বিধান নিয়ে আপত্তি তুলেছে।
তাদের বক্তব্য, স্বামীর জেল হলে স্ত্রী ও সন্তানদের ভরনপোষণের ভার কে বহন করবে আইনে তা স্পষ্ট করা নেই। এরফলে দেখা যাচ্ছে, তিল তালাক দেওয়ার স্বামীর জেল হতেই স্ত্রী আর শশুর বাড়িতে থাকতে পারছেন না। তাকে মা-বাবার বাড়ি বা অন্যত্র চলে যেতে হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিযোগকারিণীকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আইনের এই দ্বিতীয় অংশটির সংশোধন চায় তিন তালাক প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করা বহু ব্যক্তি ও সংগঠনও। তাঁদের অন্যতম মুর্শিদাবাদের রোকেয়া নারী কল্যাণ সমিতির খাদিজা বানু। তাঁর সংগঠন বহু বছর ধরে তিন তালাক প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। খাদিজার বক্তব্য, ”অধিকাংশ মুসলিম মহিলার কোনও আর্থিক সক্ষমতা নেই। স্বামীর জেল হলে তাঁর এবং সন্তানদের কী হবে এই বিষয়ে আইন নির্বাক। এরফলে মৌলবাদীরাই লাভবান হচ্ছে। তারা চায়, তিন তালাক থাকুক। আন্দোলনকারীদের আরও প্রশ্ন, তিন বছর জেল খাটার পর স্বামী ও তালাক দেওয়া স্ত্রীর সম্পর্ক কী হবে সে ব্যাপারেও আইন অস্পষ্ট।"
সুপ্রিম কোর্টে একাধিক জনস্বার্থের মামলায় এই সব প্রশ্ন তোলা হয়েছে। যদিও আইন মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব কেআর সাজি কুমার এই বিষয়ে তাঁর হলফনামায় কিছু জানাননি। তিনি আইনটির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাক প্রথাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং তা বন্ধে আইন করার পরও এটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিন সরকারের কাছে অভিযোগ আসছে। হলফনামায় সরকারের বক্তব্য, ২০১৯-এর আইনটি না থাকলে তিন তালাক বন্ধে পুলিশের কিছুই করার থাকবে না। সরকার চায় আইনটি যেমন আছে, তেমনই থাকুক।