অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সমকামী দম্পতিদের সামাজিক সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রকে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ


ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ভবন - ফাইল ফটো- এপি
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ভবন - ফাইল ফটো- এপি

ভারতে সমলিঙ্গের দম্পতিদের বিয়ের স্বীকৃতি দানের বিষয়টি সরকার ও সংসদের উপরই শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দিতে পারে সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার ২৭ এপ্রিল শুনানিতে সাংবিধানিক বেঞ্চের তরফে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ইস্যুটি স্পর্শকাতর এবং আইনসভা অর্থাৎ সংসদের এক্তিয়ার ভুক্ত, এই বিষয়ে আদালত অনেকটাই সহমত। আবার বিচারপ্রার্থীদের দাবিতেও আদালত অগ্রাহ্য করতে পারে না।

সমলিঙ্গের দম্পতির বিয়ের আইনি স্বীকৃতি কেন প্রয়োজন সে বিষয়ে মামলায় কতগুলি সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন তাতে বলা হয়, এই দম্পতিরা ব্যাঙ্কে যৌথ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন না । এমনকী নমিনি হিসাবেও তাঁরা নাম নথিভুক্ত করতে পারছেন না। একই সমস্যা দেখা দিয়েছে বিমার ক্ষেত্রেও। সেখানেও দাম্পত্যের স্বীকতি না থাকায় বিমার নমিনি হওয়া যাচ্ছে না। সন্তান দত্তক নেওয়াতেও আপত্তি উঠছে ম্যারেজ সার্টিফিকেট না থাকায়। স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্ট-এ এই ধরনের বিয়ে নথিভুক্তির সুযোগ না থাকায় ম্যারেজ রেজিস্ট্রারেরাও বিয়ে নথিভুক্ত করতে রাজি হচ্ছেন না।

প্রধান বিচারপতি বৃহস্পতিবার বলেন, আদালত যদি এই ধরনের বিয়ের স্বীকৃতিদানের ক্ষেত্রে অগ্রসর না হয়ে বিষয়টি সংসদের উপর ছেড়ে দেয় তাহলেও মামলাকারীদের ন্যায্য সমস্যাগুলিকে আড়াল করার উপায় নেই। তিনি সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে বলেন, পরের দিন এই বিষয়গুলিতে সরকারের অভিমত আদালতকে জানাতে। প্রধান বিচারপতি বলেন, সরকার বিবেচনা করুক সমলিঙ্গের দম্পতিদের সামাজিক সুরক্ষা যাতে নিশ্চিত করা যায়।

এই মামলায় কেন্দ্রীয় সরকার প্রথম দিন থেকেই সমলিঙ্গের দম্পতিদের বিয়েতে স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধিতা করে আসছে। সরকারের বক্তব্য, এই ব্যাপারে কিছু করার হলে তা সংসদ করবে। আদালত এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আইনমন্ত্রী কিরেন রিজেজুও দিন কয়েক আগে এই কথা জানিয়ে টুইট করেন।

বৃহস্পতিবার সরকারের তরফে একগুচ্ছ বাস্তব সমস্যার কথা তুলে ধরে বলা হয় এই প্রসঙ্গে যে কেন এই ধরনের বিয়ে মেনে নেওয়া যায় না। প্রথমদিনই হলফনামায় সরকার জানিয়েছিল, এই ধরনের বিয়ে ভারতের সামাজিক ও পারিবারিক ঐতিহ্যের পরিপন্থী। বৃহস্পতিবার সরকারের তরফে আদালতে বলা হয়, সমলিঙ্গের বিয়ে মেনে নিলেও প্রশ্ন উঠবে, কে স্বামী কে স্ত্রী। কারণ, স্বামী, স্ত্রী পরিচয়ের বিষয়টি শুধু বিবাহিত জীবন এবং স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এরসঙ্গে যুক্ত সম্পত্তি, সন্তান বা নিকট জনের অভিভাবকত্বের প্রশ্ন। অথচ, সমলিঙ্গের দম্পতিদের অনেকেই নারী বা পুরুষ পরিচয়েও পরিচিত হতে চান না। তাঁরা অনেকেই নিজেদের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ মনে করেন।

সরকারি আইনজীবী আরও বলেন, সমলিঙ্গের বিয়ে এই দম্পতিরা সন্তান দত্তক নিতে পারবেন। কিন্তু সেই দম্পতির একজন মারা গেলে সন্তানের অভিভাবক হিসাবে অপরজন নিজের কোন পরিচয় উল্লেখ করবেন। অভিভাবকত্ব সংক্রান্ত আইনে এই পরিচয় জরুরি।

বৃহস্পতিবার এই ধরনের একাধিক সমস্যার কথা তুলে ধরে সলিসিটর জেনারেল শীর্ষ আদালতকে ফের বোঝানোর চেষ্টা করেন, বিষয়টি জটিল। এটি সংসদের উপরই ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে।

শীর্ষ আদালতকে তিনি আরও বলেন, সমলিঙ্গের বিয়ের স্বীকৃতিতেই বিষয়টি মিটে যাবে না। ব্যক্তিগত অধিকারের পরিসর যেভাবে বিস্তৃত হচ্ছে তাতে ব্যাভিচারী আচরণকেও স্বাভাবিক দাবি করে স্বীকৃতির দাবি উঠবে। সরকারি আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, সমলিঙ্গের দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ কীভাবে হবে। ডিভোর্সের ক্ষেত্রে খোরপোষের বিষয়টি জড়িত। সেখানে কাকে স্বামী বলে ধরা হবে, সেই প্রশ্নটি মুখ্য।

মনে করা হচ্ছে, সরকারের বৃহস্পতিবারের বক্তব্যের পর আদালতও খানিক মত বদল করেছে। প্রধান বিচারপতি যেভাবে বিয়ের স্বীকৃতির বিষয়টি উহ্য রেখেও নাগরিক অধিকারগুলি সমলিঙ্গের দম্পতিদের ক্ষেত্রে বহাল রাখার কথা বলেছেন তাতে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে।

XS
SM
MD
LG