বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের জমি বিবাদ আপাতত থামছে না৷ বিশ্বভারতীর নোটিস, চিঠি, পাল্টা চিঠি সমানেই চলছে। এবার অমর্ত্য সেনের জমি নিয়ে মুখ খুললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এর আগেও তিনি এ বিষয়ে সরব হয়েছেন। বোলপুরে অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়িয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে চূড়ান্ত সমালোচনা করেছিলেন তিনি। বুধবার ২৬ এপ্রিল সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "অমর্ত্য সেনের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভাঙতে এলে ওখানে গিয়ে বসে পড়ব।"
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বোঝাতে চান, অর্মত্য সেনের বাড়ি ভাঙতে চাওয়ার পিছনে কেন্দ্রের হাত রয়েছে। বুলডোজার সংস্কৃতি বাংলার নয়। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, "আগুন নিয়ে খেলবেন না। যখন নিত্যদিন অমর্ত্য সেনকে নিশানা করা হচ্ছে, তখন চুপ আছে কেন?" নাম না করে বিশ্বভারতীর উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, "আমি ওদের ঔদ্ধত্য দেখছি। শুনছি বুলডোজার দিয়ে অমর্ত্য সেনের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া দেবে। আমিও দেখব, যদি বাড়ি ভাঙতে আসে, আমি গিয়ে বসে থাকব।"
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "কীভাবে অমর্ত্য সেনের বাড়ি ভাঙতে পারে আমি দেখব। মানুষের শক্তি বেশি না বুলডোজারের আমি দেখতে চাই।"
গত জানুয়ারি মাসে বীরভূম জেলা সফরে গিয়ে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের বাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী। সে সময়েই অমর্ত্য সেনের হাতে তাঁর জমির দলিল সংক্রান্ত নথিপত্র তুলে দেন তিনি। শুধু তাই নয়, সেখানে দাঁড়িয়ে বলেন, "বিশ্বভারতী নিজেই যেখানে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে বিনা পয়সায় জমি পেয়েছে, সেখানে কীভাবে অন্যের জমিকে নিজের জমি হিসেবে দাবি করছে তারা!"
তারপরও জমি নিয়ে বিশ্বভারতী ও অমর্ত্য সেনের মধ্যে টানাপড়েন চলছে। বিতর্কের কারণ - অমর্ত্য সেনের দাদু ক্ষিতিমোহন সেন শান্তিনিকেতনের আদি বাসিন্দা। তাঁর বাবা আশুতোষ সেন আটের দশকে একটি বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। বিশ্বভারতীর পক্ষে দাবি করা হয়, আশুতোষ সেনকে ১.৩৮ একর নয়, ১.২৫ একর জমি লিজ দেওয়া হয়েছিল। তাই বাকি জমি ফেরত চাওয়া হয়। কিন্তু সরকারি নথিতে দেখা যায়, অমর্ত্য সেনের বাবাকে ১.৩৮ একর জমিই লিজ দেওয়া হয়েছিল। এই বিতর্কই সমানে চলছে। শুধু তা নয়, ওই ০.১৩ একর জমি থেকে অমর্ত্য সেনকে উৎখাত করতে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন বিশ্বভারতীর বর্তমান উপাচার্য।