ভারতে কর্ণাটক রাজ্যে ভোটের আর দিন পনেরো বাকি। তবু তার পড়শি রাজ্য তেলেঙ্গানা থেকে চোখ সরায়নি বিজেপি। হায়দরাবাদের অদূরে জনসভা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেছেন, তেলেঙ্গানায় সরকার গড়া মাত্রই বিজেপি রাজ্যে চাকরি, শিক্ষায় মুসলিমদের জন্য বরাদ্দ চার শতাংশ সংরক্ষণ তুলে দেবে।
কর্নাটকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণার কয়েকদিন আগে একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখানকার বিজেপি সরকার। মুসলিমদের জন্য বরাদ্দ চার শতাংশ সংরক্ষণ বাতিল করে দিয়ে তা হিন্দুদের দুটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী লিঙ্গায়েত ও ভোক্কালিগ্গাদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দিয়েছে বিজেপি সরকার। বিধানসভা ভোটে হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণে এইটিই তাদের বড় অস্ত্র।
কর্নাটক সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাতিলের আর্জি নিয়ে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোন্যাল ল বোর্ড এবং জমিয়তে উলেমা-ই হিন্দু নামে দুটি সংগঠন দিল্লিতে অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সংগঠন দুটির দাবি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁদের বলেছিলেন এটা রাজ্য সরকার ও স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত। তিনি কথা বলবেন রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে।
কিন্তু তেলেঙ্গানার মাটিতে দেখা গেল তিনি নিজেই মুসলিমদের সংরক্ষণ বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন। ধর্মের ভিত্তিতে চাকরি, শিক্ষায় সংরক্ষণ চালু করা না গেলেও একাধিক রাজ্যে ওবিসি তালিকায় বিভিন্ন পেশার মানুষের স্থান হয়েছে, যাঁদের সিংহভাগ মুসলিম। রাজ্যে রাজ্যে সংখ্যালঘুদের সেই সুবিধা বাতিল করে দেওয়ার পথে হাঁটতে চলেছে বিজেপি।
অমিত শাহের ঘোষণার পর পরই মুখ খুলেছেন হায়দরাবাদের সাংসদ অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের নেতা আশাউদ্দিন ওয়েইসি। তাঁর কথায়, শাহ ও তাঁর দল সমাজকে ভাঙতে শিখেছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্ব নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে কোনও কথা নেই।
নিজের ভাষণে অমিত শাহ তীব্র আক্রমণ শানান ওয়েইসির উদ্দেশেও। বলেন, "আমরা মজলিসবাদীদের ভয় পাই না। তেলেঙ্গানায় এমন কোনও সরকার আমরা তৈরি হতে দেব না যার স্টিয়ারিং ওয়েইসির হাতে থাকবে।"
শাহের কথায় স্পষ্ট, তিনি ওয়েইসিকে আক্রমণ করে তেলেঙ্গানার শাসক দল ভারত রাষ্ট্র সমিতিকেও নিশানা করতে চেয়েছেন। কিন্তু সংরক্ষণের প্রশ্নে সরাসরি আক্রমণ করেছেন ওয়েইসির দলকেই। যা দেখে বিআরএস এবং কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, এ হল ওয়েইসির সঙ্গে মোদী-শাহের পুরনো বোঝাপড়ার খেলা। ওয়েইসির সঙ্গে কথা বলেই বিজেপি তেলেঙ্গানায় মেরুকরণের রাজনীতি জোরদার করতে চাইছে।