ভারতে মাত্র দশ মিনিটে জিনিসপত্রের ডেলিভারি দেয় ই-কমার্স সংস্থা ব্লিঙ্কইট। সেই ব্লিঙ্কইটের সাম্প্রতিক ধর্মঘট সাড়া ফেলে দিয়েছে গোটা দেশে। এই ধর্মঘট দেশের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি কেন্দ্র করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, ব্লিঙ্কইটের ডেলিভারি পার্টনারেরা সঠিক বেতন, কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দাবিতে দেশব্যাপী একযোগে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এই কর্মবিরতি সমস্ত বড় বড় ই-কমার্স গোষ্ঠীর কাছে এই বার্তা দেয় যে বাজার দখল, প্রতিযোগিতায় টিঁকে থাকা এবং লাভের অঙ্ক কষার পাশাপাশি কর্মীদের প্রতি মানবিক আচরণও কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
কোভিডের সময়ে ই-কমার্স গোষ্ঠীর ব্যবসা রমরমিয়ে বৃদ্ধি পায়। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে কর্মী ছাঁটাই ও তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। সব মিলিয়ে গোটা পৃথিবীর অর্থনীতিতে এক অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ২০২০ সালে কোভিড অতিমারীর মধ্যেই আমেরিকার সংস্থা ইনস্টাকার্টের কর্মচারীরা গোটা যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মঘটের ডাক দেয়। হ্যাজার্ড পে (প্রতিকূল অবস্থায় কাজের জন্য বাড়তি মজুরি) এবং সংক্রমণ ঠেকাতে যথাযথ ব্যবস্থা– এগুলোই ছিল তাঁদের দাবি।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ক পর্যবেক্ষকদের মতে, ই-কমার্স ও চুক্তিভিত্তিক কাজের ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের থেকে বিশেষ আলাদা নয়। ২০১৯ সালে জোম্যাটোর ডেলিভারি কর্মীরা পেআউটের দাবিতে ধর্মঘট ডাকেন। ঠিক পরের বছর একই পথে হেঁটে ভারতে চেন্নাইয়ের সুইগি কর্মীরাও যথাযথ ও স্বচ্ছ বেতননীতির দাবিতে কর্মবিরতির আহ্বান জানান। এছাড়া ওলা, উবারের ক্যাবচালকেরাও বিভিন্ন সময়ে নানান দাবিদাওয়ায় ধর্মঘট ডেকেছেন।
বস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ ও মাইকেল অ্যান্ড সুসান ডেল ফাউন্ডেশনের যৌথ সমীক্ষা জানাচ্ছে, ভারতের চুক্তিভিত্তিক কাজের ক্ষেত্রে ৯ কোটি কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে, যা দেশের জিডিপির ১%। ২০২৩ সালের মধ্যেই এই বৃদ্ধি ১৭% অতিক্রম করতে পারে। এর বাজারমূল্য হতে পারে ৪৫৫ বিলিয়ন ডলার।
অবশ্য ছাঁটাইয়ের ফলে কর্মীদের কাজ হারানোর সম্ভাবনা এবং কর্মরত অবস্থায় আইনি ও সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যবিমা, সবেতন ছুটি, অবসর নেওয়ার পর পেনশন প্রভৃতির অভাব এই শিল্পে ভাবিয়ে তোলার মতো কয়েকটি সমস্যা।
এইসব সমস্যার সমাধান করতে ২০২০-র সেপ্টেম্বরে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের জন্য সংসদে সামাজিক নিরাপত্তাবিধি পাশ হয়। কিন্তু কর্মীদের অভিযোগ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই সুরক্ষাবিধির সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হন।
আচরণবাদী অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য, ভারতের চুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রটি যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। এই ক্ষেত্রে কর্মরত ব্যক্তিরা বেতন ও নিয়োগ সংক্রান্ত অন্যান্য সুযোগসুবিধার পাশাপাশি মানবিক ব্যবহার পাওয়ারও অধিকারী। ফলে কর্মীদের প্রতি নিয়োগকর্তাদের মানবিক আচরণ, তাদের বিশ্বাস অর্জন, তাদের প্রতি সহমর্মিতাও এই ক্ষেত্রের বিকাশে অত্যন্ত জরুরি।