অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতের গুজরাতে বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তিতে সুপ্রিম কোর্টে সমালোচিত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার


২০০২ সালে ভারতের গুজরাত রাজ্যের গোধরায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়ে ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ করা হয় ও গণহত্যা সংঘটিত হয়। গত বছর ২০২২-এ ১৫ অগস্ট ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বহুল চর্চিত বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১১ ধর্ষককে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাতে বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি সরকার। অভিযোগ ওঠে, বিধানসভা ভোটের আগে হিন্দুত্ব ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত। গণধর্ষণ ও গণহত্যার মতো নৃশংস কাণ্ডে জড়িতদের মুক্তি দেওয়া নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

এই নিয়ে এবার সুপ্রিম কোর্টের তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও গুজরাত সরকার। মঙ্গলবার ১৮ এপ্রিল বিচারপতি কেএম জোসেফ ও বিচারপতি বিভি নাগারত্নার ডিভিশন বেঞ্চ বলে, "একজন অন্তঃসত্ত্বাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে , সেই সঙ্গে খুন করা হয়েছে একাধিক লোককে। এই জঘন্য অপরাধকে আর পাঁচটা সাধারণ ৩০২ ধারার (খুনের ধারা) সঙ্গে তুলনা করা যায় না!" আগামী ২ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি। ওই দিনই মামলার রায় ঘোষিত হতে পারে।

এদিন সুপ্রিম কোর্টের ওই বেঞ্চের তরফে উষ্মা প্রকাশ করে বলা হয়, ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার আগে অপরাধের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত ছিল। বলা হয়, "প্রশ্ন হল, কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার কি আদৌ গুরুত্ব দিয়ে বিচার করেছে এই মুক্তির বিষয়টি! আজ বিলকিস বানোর সঙ্গে এমনটা হয়েছে, কাল অন্য যে কারও সঙ্গে হতে পারে। আপনি বা আমিও আক্রান্ত হতে পারি। যদি মুক্তির পিছনে যথাযথ কারণ দেখানো না যায়, তবে আমাদের নিজেদের মতো উপসংহার টানতে হবে এই কেসের।"

প্রসঙ্গত, ধর্ষকদের মুক্তির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতে দায়ের হয় মামলা। গত ২৭ মার্চ সেই মামলার শুনানিতে ২০০২ সালে গোধরা দাঙ্গার সময়ে ঘটা ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানোর গণধর্ষণ ও গণহত্যাকে ‘সাংঘাতিক’ বলে উল্লেখ করে, ধর্ষকদের মুক্তি সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র জমা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও গুজরাত সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি কেএম জোসেফ ও বিচারপতি বিভি নাগারত্নার ডিভিশন বেঞ্চ।

মঙ্গলবারের শুনানিতে ওই নথি কেন জমা দেওয়া হয়নি কেন্দ্র ও গুজরাত সরকারের আইনজীবীর কাছে তা জানতে চান বিচারপতিরা। জবাবে জানানো হয়, ২৭ মার্চের আদেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হচ্ছে। এর পরেই গুজরাত সরকারের নিন্দা করে বিচারপতি কেএম জোসেফ বলেন, "আপেলের সঙ্গে যেমন কমলালেবুর তুলনা হয় না, তেমনই একটা গণহত্যাকে একক খুনের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। এটা সমাজের বিরুদ্ধে ঘটা এক অপরাধ, একটা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘটা অপরাধ। যা আর পাঁচটার সঙ্গে তুলনা করা যায় না, তার ট্রিটমেন্টও অন্যদের মতো হবে না।"

XS
SM
MD
LG