তাপমাত্রার পারদ চড়ছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরভাগেও। বৃষ্টি না হওয়ায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাতে ক্ষতির মুখে পড়েছে চা চাষ। উত্তরবঙ্গই এ রাজ্যে চা উৎপাদনের মূল অঞ্চল, যেখান থেকে চা শুধু দেশের নানা প্রান্তে নয়, বিশ্বের নানা দেশেও রপ্তানি হয়।
চা চাষের জন্য অনুকূল তাপমাত্রা হচ্ছে ২৮ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে এই মুহূর্তে উত্তরবঙ্গের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। এই তীব্র দাবদাহে ঝলসে যাচ্ছে চা গাছের কচি পাতা। সবুজ পাতা কালচে লাল হয়ে যাচ্ছে।
ফলে চলতি বছরে ফার্স্ট ফ্লাশ-এ প্রায় ৩০% উৎপাদন কম হয়েছে। অপরদিকে এপ্রিল মাস পড়তেই তাপমাত্রা আরও বাড়ায় চা বাগানে বেড়েছে পোকার আক্রমণ। গ্রিন ফ্লাই, লাল মাকড়সা, লুপার মতো পোকা খেয়ে ফেলছে চা গাছের পাতা। এমনকী পোকার উৎপাতে সেকেন্ড ফ্লাশ-এর কুঁড়িও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই শুরু হয় সাধারণত চা-চাষের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়েই মূলত সেকেন্ড ফ্লাশ চা-পাতা উৎপাদন হয়। এই সময়ের উৎপাদিত চা-পাতা সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি করার সুযোগ পান। তবে এবারের গ্রীষ্ম কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে উত্তরবঙ্গের কুড়ি হাজারের বেশি ক্ষুদ্র চা চাষিকে।
গত কয়েক বছর ধরে দেশের মোট উৎপাদিত চায়ের অর্ধেকের বেশি উৎপাদন করেন এই ক্ষুদ্র চা চাষিরা। তথ্য বলছে, উত্তরবঙ্গের মোট উৎপাদিত চায়ের ৬৫ শতাংশ আসে ক্ষুদ্র চা চাষিদের কাছ থেকে। আর দেশের মোট উৎপাদিত চা এর ৫২ শতাংশ উৎপাদন করেন ক্ষুদ্র চা চাষিরা।
জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা-চাষি সংগঠনের সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী জানান, কৃত্রিমভাবে জলসেচ ও মূল্যবান কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনও লাভ হচ্ছে না। কাঁচা চা-পাতার অভাবে উত্তরবঙ্গের ৯০ শতাংশ বটলিফ চা-ফ্যাক্টরি বন্ধ রয়েছে। এবছর ফার্স্ট ফ্লাশ-এর পাতাও চাষিরা উৎপাদন খরচের নীচে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। নিলামের ক্ষেত্রেও গত বছরের তুলনায় চায়ের দামে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে এবার। এমন পরিস্থিতিতে সেকেন্ড ফ্লাশ-এর উৎপাদনের দিকে নজর ছিল ক্ষুদ্র চা-চাষিদের। কিন্তু সেখানেও বড় বাধা তৈরি করেছে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা। উৎপাদন তো দূরের কথা। চা-গাছ বাঁচানোই এখন যেন চাষিদের কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ।