ভারতের অন্যতম প্রধান ধনকুবের গৌতম আদানি, আদানি গোষ্ঠীর মালিক ও কর্ণধার। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কারণে সরকারি ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে আদানি একনাগাড়ে বৃদ্ধি করেছেন নিজের বাণিজ্য-সাম্রাজ্য।
তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নে বিপুল বিনিয়োগ করেছিল আদানিরা। ফলে সাম্প্রতিক হিন্ডেনবার্গ-কাণ্ডের পর দেশের পরিকাঠামো ক্ষেত্রে উন্নয়নের হালহকিকত নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞ মহল। আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দামের বাধাহীন পতন দেখে তাঁদের প্রশ্ন, এবার পরিকাঠামো উন্নয়নে কে আর্থিক সহায়তা করবে?
দেশের একটা বড় অংশের মানুষ পরিকাঠামোর বিষয়টি দু’ভাবে দেখে অভ্যস্ত। হয় ধুঁকতে থাকা সরকারি সংস্থা যথাযথ পরিষেবা দিতে ব্যর্থ হবে, অথবা বেসরকারি সংস্থা এসে পরিকাঠামো নির্মাণ করে সেটা ব্যবহারের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ মাশুল হিসেবে দাবি করবে। অতএব সব মিলিয়ে আদানিকাণ্ডের পর পরিকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টি যথেষ্ট জটিল ও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
সম্প্রতি আমেরিকার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ গ্রুপ তাদের রিপোর্টে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্টক মার্কেটে কারচুপি ও প্রতারণার মতো গুরুতর অভিযোগ করেছে। এই রিপোর্ট প্রকাশিত হতেই প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে দেশজুড়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে বিরোধী দলগুলি। আদানি গোষ্ঠীতে সরকারি সংস্থা এলআইসি, এসবিআই-এর অর্থ বিনিয়োগের খবর প্রকাশ হতেই বিরোধীদের প্রতিবাদ ভিন্ন মাত্রা পায়।
ভারতের বাইরে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইজরায়েল, শ্রীলঙ্কার বাজারেও প্রবেশ করেছে আদানি গোষ্ঠী। বন্দর, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎকেন্দ্র, কয়লাখনি, সোলার ফার্ম, গ্যাস স্টেশন সর্বত্রই তাঁদের রমরমা। খুব স্বাভাবিক ভাবেই গোষ্ঠীর এই উল্কার মতো উত্থান ও আয়বৃদ্ধির বহরকেও ভাল চোখে দেখেননি দেশের একটা বড় অংশের মানুষ।
সংসদে গৌতম আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্পর্ক ও দেশের অর্থনীতিতে তার প্রভাব নিয়ে চাঁছাছোলা ভাষায় কটাক্ষ করেছিলেন বর্তমানে সংসদ থেকে নির্বাসিত ভারতের জাতীয় কংগ্রেস-এর নেতা রাহুল গান্ধী। এছাড়াও কংগ্রেস সহ একাধিক বিরোধী দল আদানিকাণ্ডে যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্তের দাবিতে অনড়। আদানি গোষ্ঠী এইসব অভিযোগ অস্বীকার করলেও সুপ্রিম কোর্ট ওই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করতে ছয় সদস্যের কমিটি তৈরি করেছে।