অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

উত্তরপ্রদেশের গ্রাম থেকে পেনসিলভেনিয়ায় সুমিত, জেদ করেই পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছিলেন


সুমিত সিং
সুমিত সিং

ভারতের উত্তরপ্রদেশের ছোট্ট গ্রাম শিবসিংপুর। দারিদ্র্য, সংস্কার, জীবিকার তাড়নায় ঠাসা আর পাঁচটা গ্রাম যেমন হয়, শিবসিংপুরকে তার থেকে আলাদা করা যায় না। কিন্তু এই গ্রামেই সম্প্রতি হইহই পড়ে গেছে এক ‘সেলিব্রিটি’কে নিয়ে। গ্রামের মানুষদের চোখের মণি হয়ে উঠেছেন গ্রামেরই এক ছেলে।

শিবসিংপুরে বড় হয়েছেন সুমিত সিং। এখন তিনি আমেরিকাবাসী। পেনসিলভেনিয়ার এক কোম্পানিতে সিস্টেম ইনোভেটরের কাজ করেন সুমিত। মাত্র ২২ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর এই সাফল্য গর্বিত করেছে গোটা গ্রামকে। একসময় এই ছেলেকেই যে পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল, সেসব আজ আর কেউ মনে রাখেননি।

গ্রামের বাড়িতে চাষবাসের উপরেই নির্ভরশীল ছিল সুমিতের পরিবার। ৬ জনের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরতো। বংশানুক্রমে চাষের লাঙলই ওঠার কথা ছিল সুমিতের হাতেও। কিন্তু সে পড়তে চেয়েছিল। লেখাপড়া করে শিক্ষার আলো আনতে চেয়েছিল শুধু নিজের বাড়িতে নয়, গোটা গ্রাম জুড়েই। অনেক ধমক, অনেক চোখ রাঙানি পেরিয়ে তাই আজ সে পৌঁছে গেছে সাফল্যের শিখরে। সেদিনের সেই পড়তে চাওয়া জেদি ছেলেকেই এখন তাই মাথায় করে রেখেছেন শিবসিংপুরবাসী।

সংবাদমাধ্যমের কাছে সুমিত জানিয়েছেন, “আমাদের গ্রামে লোকজনের একটা প্রচলিত ধারণা হল, চাষার ছেলের বইখাতা ধরার দরকার নেই, কারণ তাদের হাতে লাঙলই ভবিতব্য। আমাকেও ছোট থেকেই সীমা বজায় রেখে চলতে হয়েছে। তবে আমি বরাবর চেষ্টা করেছি, যাতে সামাজিক এই প্রচলিত ধারণা ভেঙে বেরিয়ে আসতে।”

তবে নিজের স্বপ্নের সিঁড়ির ধাপে ধাপে সুমিত পাশে পেয়েছিলেন তাঁর পরিবারকে। সুমিতের বাবা নিজে কখনও স্কুলে পা রাখেননি। কিন্তু মনে প্রাণে চেয়েছেন তাঁর সন্তানরা লেখাপড়া শিখুক। সুমিত বলেন, “আমি অনেক ভাগ্যবান যে আমার বাবা নিজে শিক্ষিত না হলেও তাঁর মন সংস্কারে আচ্ছন্ন না। তিনি চাষ করে খান, কিন্তু কখনও চাননি আমরাও ওঁর মতোই হই।

স্থানীয় স্কুল থেকে প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করার পর বিদ্যানজ্ঞান নামক এক প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন সুমিত। গরিব ছেলেমেয়েদের বিনা খরচে সেখানে পড়ানো হয়। ২০১৭ সালে স্কুলের শিক্ষা শেষ করেও ক্ষান্ত হননি তিনি। তাঁদের গ্রামে, তাঁর মতো আর পাঁচটা ছেলে মেয়ে প্রাইমারি স্কুলের পর আর বইখাতাই ধরে না। কিন্তু বিদেশে পড়াশোনা করার জন্য একের পর এক পরীক্ষায় বসেন সুমিত। সাফল্য আসে হাতেনাতে। অবশেষে আমেরিকার পেন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন।

সম্প্রতি কম্পিউটার সায়েন্সে বিএসসি ডিগ্রি পান সুমিত। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি পেনসিলভেনিয়াতে এক নামকরা কোম্পানিতে মোটা মাইনের চাকরি পেয়ে গেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রেই এখন তাঁর বাস।

এদিকে উত্তরপ্রদেশের গ্রামে সুমিত রাতারাতি হয়ে উঠেছেন লোকাল সেলিব্রিটি। গ্রামের চাষার পরিবার থেকে পড়াশোনার কথাই কেউ ভাবতে পারেনি, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর এই অভাবনীয় সাফল্যে চোখ ছানাবড়া হয়ে গিয়েছে সকলের। সুমিত প্রমাণ করেছেন, শিক্ষাই দারিদ্র্য থেকে মুক্তির অন্যতম হাতিয়ার।

XS
SM
MD
LG